রবিবার : একটি জীবন-যন্ত্রনার উপাখ্যান






'রবিবার' সিনেমাটির শুরুতেই দুটো লাইন মাথায় আসছে। 

যে ছিলো পাশে তোমার 
চাও নি তাকে তুমি, 
চলে গেছে যখন জীবন
শীতল মহাদেশ হয়েছিলো মরুভূমি। 

ছবির নামঃ রবিবার
পরিচালনায়ঃ অতনু ঘোষ
অভিনয়েঃ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জয়া আহসান, সুদীপা বসু, তথাগত বন্দোপাধ্যায়, মিথুন দেবনাথ, সস্বতী সিনহা, শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৫/৫

মন্তব্যঃ সিনেমাটি শুরু হয় জয় গোস্বামীর 'ঈশ্বর আর প্রেমিকা সংলাপ' কবিতার
'বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’
এ দুটি লাইন দিয়ে। লাইন দুটির সঙ্গে দুটি জীবন, দুটি প্রেম যেনো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। তবে সিনেমার কাহিনীটি নিয়ে বললে, এত বাস্তব অথচ স্বাভাবিক গল্প বলার ঢং বাঙলা সিনেমায় খুব কমই আছে। আর অতনু ঘোষের এ ঢং-টিই প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বত্র। আমার মত আরো ডজন খানেক দর্শক একবাক্যে টুপি খোলা অভিবাদন দিতে দাঁড়িয়ে আছে। কেবল অপেক্ষার পালা।
জয়া আহসানের কথা বলবার আগে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কিছু কথা বলবো।
অনেকেই বলে থাকে, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির ( Prosenjit Chatterjee ) 'অটোগ্রাফ' সিনেমাটি অভিনয় জীবনে নতুন বাঁক তৈরী করেছে। যে বাঁক পেরিয়ে তিনি দু পায়ের জনপদ থেকে পেয়েছে অসংখ্য কিছু। অটোগ্রাফ তার নতুন দিশা হলে আমার মতে রবিবার তার অভিনয় জীবনের পরিপক্ক এক নগরী। যা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জিকে এ কালের সবচেয়ে মর্ডান অভিনেতা হিসেবে দর্শক পরিচয় দেয়।
আর জয়া আহসানকে ( Jaya Ahsan ) নিয়ে বললে বরাবরের মত একটি প্রশ্ন মনে আসবে, এত বাস্তব, জীবনের নিরিখে অভিনয় করাটা ঠিক কোথায় পেলেন তিনি?
তার চেহারা নাকি সংলাপ বলার আঙ্গিকটাই এর মূল উৎস!
এই জিজ্ঞাসাটা উনি উত্তর দিলেও যতবার তার অভিনয় দেখবো, মনের কোণে উঁকি দিবে। তবে সিনেমা জয়া প্রসেনজিতের সঙ্গে তাল রেখেই অভিনয়টা করেছেন। একটি বারও পা হড়কায় নি কিংবা উতরে যায় নি উপরে।
ক্যামেরার কাজ সম্পর্কে এক কথায় বলবো, সিনেমার প্রেক্ষিতে ক্যামেরা চলেছে। গল্পের মেজাজ ধরে কথা বলেছে, হেসেছে ; জীবন-যন্ত্রনায় ভেসেছে। দেবোজ্যোতি মিশ্রের গানগুলো গল্পকে একটু তেঁতিয়ে তুলে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছে।
বিশেষ করে রুপঙ্ক বাগচীর কণ্ঠে,

'মনে পড়ছিল ভীষণ তোমায়
দারুন মনে পড়ছিল,
মনে পড়ছিল ভীষণ তোমায়
দারুন মনে পড়ছিল।

দূরে গ্রামোফোনে আলি আকবর,
আত্মমগ্ন বাজছিল।
আলি আকবর শরদের তারে
তোমায় সুরে বাঁধছিলো'
গানটি হঠাৎ ঢেউ এসে পা ভিজিয়ে আবার মাঝখানে, দূরে মিলিয়ে যাওয়ার মত একটা অনুভূতি তৈরী করে।

শেষকথাঃ লেখার শুরুতে যেমন দুটো লাইন দিয়ে শুরু করেছিলাম, শেষটাও কবিতার লাইনেই করবো। এর অবশ্য একটা যুতসই কারণ বের করেছি৷ কবিতার প্রতি শব্দে, লাইনে পাঠক যেভাবে জীবন-যন্ত্রনা উপলব্ধি করে, মননের পরতে পরতে তৃপ্ত-অতৃপ্তার স্বাদ নিয়ে তেতো-মিষ্টতার তফাৎ বুঝতে পেরে দুটি আলাদা, অসম মেরুকরণ করে নেয় - সিনেমাটি আমার তেমনই লেগেছে৷ যেখানে দুটি বিপরীত মেরুর মানুষের জীবন-যন্ত্রনায় তিক্ততার চিত্রায়ন ঘটেছে সু-নিপুন হাতে। এ সিনেমাটি নিয়ে বছরটা তৃপ্তিতে কেটে যাবে। একটি রবিবার, বারো কিংবা ষোলো ঘন্টায় একটি জীবন, একটি যন্ত্রনার উপাখ্যান।

জীবন তোমারে ফেলিয়াছে সাগরে
ডুবিয়া গিয়াছো কি জলে?
টানিয়া সে-ই তুলিছে আবার
জীবন যন্ত্রনা বুঝাইতে চাহিছে - নানা রকম ছলে।

লিখেছেনঃ শাকিল মাহমুদ

No comments

Powered by Blogger.