Phone-a-Friend : বিনোদনের মজাদার প্যাকেজে আধুনিকায়ন
প্লটঃ একবিংশ শতাব্দিতে স্মার্টফোনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে উপস্থাপন করে Zee5 'Phone-a-Friend' ওয়েব সিরিজটি নির্মাণ করে। মানুষের চেয়ে সেরা ও একমাত্র বন্ধু হিসেবে স্মার্টফোনের কাহিনীকে তুলে ধরা হয়েছে সিরিজে। কলেজের একজন অধ্যাপকের হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নিসঙ্গতা দূর করতে আগত হয় তার-ই স্মার্টফোন৷ তবে আর দশটা স্মার্টফোনের মত নয়৷ কথা বলা থেকে শুরু করে, নানা রকম সাহায্যকারী হিসেবে বরুণ পাণ্ডের জীবনের এক অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে উঠে ফোন বা লিওনার্দো৷ এক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, আত্মবিশ্বাসী বরুণ পাণ্ডের জন্ম হয়। কিন্তু মনের ভেতরে একটু খুঁত থেকেই গেলো বরুণের। স্কুল জীবনের ক্রাশ জিয়াকে সে মিস করছে! একথা জানাতেই লিওনার্দো বা বরুণের স্মার্টফোন খুঁজে বের করে জিয়াকে। আর ধীরে ধীরে বরুণ ও জিয়ার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে স্মার্টফোন - লিওনার্দো৷ এভাবে চলতো চলতে এক পর্যায়ে ফোনটি জিয়ার প্রেমে পড়ে যায় এবং এ নিয়ে বরুণের সঙ্গে লিওনার্দোর ঝগড়া হয়৷ ফলে লিও বরুণের বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হয়। এক সময় লিও বরুণকে ট্রাপে ফেলে জিয়ার কাছে অসৎ, চরিত্রহীন প্রমাণিত করে৷ যার ফলে জিয়া ও বরুণের সম্পর্কে ফাটল ধরে৷
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় বরুণ লিওনার্দোর উপর রেগে যায় এবং তাকো ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়।
যা হোক প্লট নিয়ে অনেক্ষণ কথা হলো। শেষে জিয়া ও বরুণকে একত্র করে দিতে লিও ভূমিকা রাখলেও তাকে ফিরে আসতে হয় নিজের জগতে। বন্ধু বরুণকে ছেড়ে লিও চলে যায়।
অভিনয়েঃ
বরুণ পাণ্ডে চরিত্রে অভিনয় করেছেন আখলাক খান, লিওনার্দো বা স্মার্টফোন চরিত্রে মন্ত্র এবং জিয়া চরিত্রে স্বাতী কাপুর।
স্ক্রিপ্ট নিয়েঃ
সিরিজের সবচেয়ে মজাদার বিষয় হলো স্মার্টফোনের বিবর্তনকে তুলে ধরে মানুষের একাকিত্বের একমাত্র বন্ধু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে৷ যার ফলে সিরিজে বন্ধুত্ব, প্রেম সহ বিনোদনের একটি ফুল প্যাকেজ Phone-a-Friend. স্ক্রিপ্ট নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে নির্মিত এ ওয়েব সিরিজটি এক মূহুর্তের জন্য আপনাকে হতাশ করবে না। বরং এক নিমিশে শেষ করার তাড়না থেকে আপনি প্রায় চারঘন্টা বত্রিশ মিনিট সিরিজের প্রতি পর্বে বিচরণ করবেন। স্ক্রিপ্টে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে একটি আত্মবিশ্বাসহীন, নিঃসঙ্গ মানুষ কিভাবে একটু বন্ধু (স্মার্টফোন) পেয়ে রাতারাতি বদলে যায়, আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়৷ সুতরাং স্ক্রিপ্ট করা হয়েছে সভ্যতার আধুনিকায়ন ও নিঃসঙ্গ, আত্মবিশ্বাসহীন সে সব মানুষের কথা ভেবে৷ তবে আপনাকে স্মার্টফোনের ইন্টিলিজেন্সকে সঠিক ব্যবহার করারও একটি বার্তা পরোক্ষভাবে দেয়া হয়েছে৷
পরিচালনা নিয়েঃ
সিরিজটি সমসাময়িক ধারার বাইরে অন্যতম এবং সেরা একটি সিরিজ৷ সে হিসেবে সিরিজের পরিচালকদ্বয় অ্যালসন প্যাটেল ও যশ ডেভ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার৷
অভিনয় নিয়েঃ
সিরিজটিতে বরুণ ও জিয়াকে দর্শক প্রধাণ চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করলেও আমার কাছে ফোন অর্থাৎ লিওনার্দো চরিত্রে অভিনয় করা মন্ত্রকেই প্রধান চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করতে হবে৷ সহ-অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কোনরূপ শারীরিক অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন না করে কেবল ভয়েস অ্যাক্টিং দিয়ে পুরো সিরিজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চারটেখানি কথা নয়৷ সুতরাং বরুণ পাণ্ডে ও জিয়ার চেয়ে সিরিজে লিওনার্দোই এগিয়ে থাকবে৷
সঙ্গীত নিয়েঃ
তুহিন চোঙ্গদার ও সোমরাজ গাঙ্গুলীর মিউজিক সিরিজে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে৷
সিনেমাটোগ্রাফি ও সম্পাদনা নিয়েঃ
এ সিরিজে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি রেখে সিনেমাটোগ্রাফার রবিবর্মণ নীলামেগাম এবং সম্পাদনায় থাকা সর্বেশ কুমার সিংহ।
যেখানে একটি স্মার্টফোনকে সিরিজে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তার বিচরণকে ফুটি তোলা হয়ে দর্শকের কাছে সেখানে এ দুজনের কসরতটা বেশি না হলে সিরিজটা অসম্পূর্ণই থেকে যেতো৷
© শাকিল মাহমুদ

No comments