ডেথ ইন দ্য গান'জ : একটি প্রেম-বিচ্ছিন্নতা-মৃত্যুর সমীকরণ




সিনেমার নাম শুনে মনে হতে পারে এটি একটি সাসপেন্স বা থ্রিলার অথবা মার্ডার মিস্ট্রি'র গল্প৷ কিন্তু সিনেমার থ্রিলিং আছে, এক আধটু সাসপেন্স আছে - তবে আর দশটা সাসপেন্স, থ্রিলারের মত নয়। স্বাভাবিক, সরল এবং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে উঠা একটি গল্প নিয়ে গড়িয়েছে অ্যা ডেথ ইন দ্য গান'জ সিনেমাটি। 
সিনেমাটি খোদ বিনোদনের জন্য বা স্রেফ সময় কাটানোর জন্য দেখতে চাইলে বলবো - এটি আপনার জন্য নয়৷ সুতরাং বুঝতেই পারছেন সিনেমাটি দেখতে হবে প্রতিটা দৃশ্যে মনোযোগ দিয়ে। 

সিনেমার শুরুটা শেষ দিয়ে। একটি গাড়ী দুজন মানুষ একটি লাশ!
এরপর গাড়ী চলতে শুরু করে এক সপ্তাহ পেছনে৷
যেখানে একটি বাড়ী, একটি পরিবার ও একজন পিতৃহারা, পরীক্ষায় ফেল করা শুতুর একখণ্ড ছবি চিত্রায়ন করা হয়েছে।
শুতুকে সকলেই ভালোবাসে তবে সময়ে সুযোগে প্রত্যেকেই তাদের বিনোদনের খোড়াক করে নেয়। বিশেষ করে বিক্রমজিৎ। প্রথম দিনই সে শুতুকে ভয় দেখায়। এতে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে বিক্রম। শুতুও নিজেকে পরিবারের সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। একমাত্র তানি, নন্দু-বনির মেয়ে - যে কিনা শুতুকে বুঝতে পারে এবং তার একমাত্র সহচর৷
এমনভাবে দিন কাটতে থাকে। ধীরে ধীরে শুতু প্রেম অনুভব করে মিমির প্রতি৷ কিন্তু মিমি মজে আছে বিক্রমের প্রতি৷ অথচ বিবাহিত হওয়া স্বত্ত্বেও যৌবনের চাহিদার উৎস বানিয়ে নেয় মিমিকে - যা মিমি আদৌ বুঝে না। যার ফলে বিক্রম যখন থার্টিফার্স্ট নাইটের পার্টিতে বউয়ের সামনে মিমিকে এড়িয়ে যায় - তা মিমির ইগোতে লাগে৷ সে কারণে বলির পাঠা হতে হয় শুতুকে। যৌবন লালসায় কুপোকাত করে উস্কে দেয় শুতুর মিমির প্রতি ভালোবাসা।
এভাবেই এক সপ্তাহের জীবনচক্রে একটি প্রেম ও বিচ্ছিন্নতা একটি মৃত্যুর জন্ম দেয়।

পরিচালনা নিয়েঃ মুকু শর্মার গল্পে কঙ্কনা সেন শর্মা ও রিশা রিন্দানির স্ক্রিনপ্লেতে সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন কঙ্কনা সেন শর্মা। চিত্রনাট্যে অসাধারণ গাঁথুনী এ সিনেমার মূল ও প্রধাণ অস্ত্র। সুতরাং এক বাক্যে পরিচালক হিসেবে কঙ্কনার মুন্সিয়ানাকে ১০০ তে ১০০ না দিলে অসম্মান করা হয়৷

অভিনয় নিয়েঃ এ সিনেমাটি মূলত শুতুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। তবে শুতুকে সর্বোপরি সাপোর্ট দিয়েছে অন্যান্য অভিনয়শিল্পীগণ। শুতু চরিত্রে বিকান্ত ম্যাসেকে দূর্দান্ত লেগেছে।
এছাড়া তানি চরিত্রে আর্য শর্মা ঠিকঠাক ছিলো।
ওম পুরীর অভিনয়ও ছিলো বেয় মেদহীন৷
তাছাড়া সিনেমায় নজর কাড়ার মত অভিনয় করেছেন বিক্রমজিৎ চরিত্রে থাকা রণভীর শোরে।
মিমি চরিত্রে কালকি কোচলিন, নন্দু চরিত্রে গুলশান দেওয়াইয়া, বনি চরিত্রে তিলোত্তমা শোমে সহ অন্যান্যদের অভিনয়ও ছিলো স্বাভাবিক, সরল।

সঙ্গীত নিয়েঃ সিনেমাটিতে স্ক্রিনপ্লে যেমন প্রাণ দিয়েছে। তেমনই সঙ্গীত এ সিনেমার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে দ্বিগুন৷
সঙ্গীতের জন্য সাগর দেসাইকে চোখ বুঝে ৫০ মার্কস না দিলেই নয়।

সিনেমাটোগ্রাফি ও সম্পাদনাঃ এ সিনেমায় বাকি কাজটা করেছে সিনেমাটোগ্রাফি ও সম্পাদনা। শীর্ষ রায়ের ক্যামেরায় ধারণ করা প্রতিটা দৃশ্যে আপনার চেখ আঁটকাবে। এবং সিনেমা দেখার যে তৃপ্তও তার পরিপূর্ণটাই পাবেন। আর সকলকের জন্য বলে রাখি, এ সিনেমায় শীর্ষ রায় শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফারের পুরস্কার অর্জন করেন। এদিকে শীর্ষ রায়ের ফ্রেম বন্দি দৃশ্যগুলোয় সৌন্দর্য ফুটিয়েছে আরিফ শেখ ও মানস মিত্তাল-এর সম্পাদনা।

শেষ কথাঃ ঝাড়খণ্ডের ম্যাকলাস্কিগঞ্জে অ্যা ডেথ ইন দ্য গান'জ-এ সে বীজ নির্মাতা বপণ করেছে তা এক পরিপক্ক ফলবান গাছ হয়েছে বটে৷ কঙ্কনা সেন শর্মার এটিই অভিষেক সিনেমা। আর এ সিনেমা দিয়েই তিনি লাভ করেন ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার সহ আন্তর্জাতিক ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড-এ সেরা পরিচালকের পুরস্কার।

© শাকিল মাহমুদ

No comments

Powered by Blogger.