ন হন্যতে : সম্পর্ক-ই যেখানে শেষ কথা

ন হন্যতে চলচ্চিত্রের পোস্টার 


চাপা পড়ে মরে গেছে যে সম্পর্ক, তুমি কি করে বাঁচাবে তাকে! 
রক্তের টানে বেঁচে যাবে নিজেই, বরং তোমায় মেরে দিবে আবেগের কাছে৷ 

এই কথাগুলোকে অনেকক্ষণ ভেবে ঠিক করলাম। ন হন্যতে সিনেমার জন্য এ কথাগুলোই যথোপযুক্ত বলে মনে হলো।

সিনেমাঃ ন হন্যতে 
পরিচালনাঃ রিংগো ব্যানার্জি

গল্প নিয়েঃ সিনেমার গল্প নিয়ে আলাপের প্রথমেই বলে নেই এটি মৈত্রীয় দেবীর ন হন্যতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। নির্মাতা গল্পটি দাঁড় করিয়েছেন Zhang Ling এর লেখা The Great Tangshan Earthquake নিয়ে নির্মিত  After Shock সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে৷ গল্প নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে, একটি আবেগতাড়িত গল্প৷ যেখানে জরাজীর্ণ এক বিল্ডিং-এর তলায় চাপা পড়ে আলাদা হয়ে যায় মূহুর্তেই৷ সুড়কির তলায় চাপা থাকা জীবন - অভিমান আর অপরাধবোধ নিয়ে বেঁচে থাকে দীর্ঘ সময়। জীবনের পরাবাস্তবতার যে চিত্র গল্পে এঁকেছেন নির্মাতা তার জন্য গল্পকার হিসেবে মুন্সিয়ানার ছাঁপ রেখেছেন বলতে হবে৷

পরিচালনা নিয়েঃ পরিচালনার প্রথমেই বলবো চিত্রনাট্যে বেশ দূর্বলতা লক্ষণীয়। বেখাপ্পা কিছু ঘটনার চিত্রায়ন পুরো সিনেমাটিকে খাপছাড়া করে দিয়েছে। বিশেষ করে শিউলির প্রেমের বিষয়টা অযৌক্তিক লেগেছে৷ কিন্তু নির্মাতা হয়তো চেয়েছেন তথাকথিত প্রেমকে বাদ রাখতে। কিন্তু সেক্ষেত্রে গোটা বিষয়টাকে এড়িয়ে গেলে ভালো হতো। এরপর রতনের সঙ্গে লাবনীর প্রেম, বিয়ে - পুরো বিষয়টাই গুবলেট আকারে উপস্থাপিত হয়েছে৷ এ বিষয়টি আরেকটু পরিস্কার হওয়া উচিত ছিলো। এছাড়া সিনেমার অন্যান্য বিষয় ঠিকঠাক৷

অভিনয় নিয়েঃ সিনেমাটির প্রাণ গল্প কিন্তু ফুসফুস হিসেবে ছিলো রুপা গাঙ্গুলীর অনবদ্য অভিনয়৷ সিনেমায় প্রত্যেকের আলাদা আলাদা চরিত্রায়নের কারণে যোগ্য সহযোগী হিসেবে কেবল মাত্র ছিলেন শিউলি চরিত্রে অভিনয় করা সায়নী দত্ত। এছাড়া রাহুল ব্যানার্জি, দেবশঙ্কর হালদার - দুজনের অভিনয়ও চমকের ছাঁপ ফেলেছে সিনেমা জুড়ে৷ এদিকে প্রিয়াঙ্কা সরকার, চৈতী ঘোষালের অভিনয়ও ভালো ছিলো।

মিউজিক নিয়েঃ সিনেমার গানগুলো গল্পের শরীর ছুঁয়ে ছিলো। সেখানে শিহরণ তুলেছে আবহ সঙ্গীতের সুর।
শ্রীরাম ইউসুফের সঙ্গীতে সিনেমার ভাষা হয়েছে সরল এবং দর্শককে বাধ্য করেছে গল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে৷

সিনেমাটোগ্রাফিঃ সিনেমায় সিনেমাটোগ্রাফির আহামরি কিছু চোখে পড়ে নি৷ বলতে গেলে যুতসই কোনো দৃশ্য ছিলোই না৷ সাদামাটাভাবে চিত্রগ্রহণ করেছেন চিত্রগ্রাহক।

মন্তব্যঃ সিনেমায় তিনটি দৃশ্য আপনাকে আপ্লুত করবে৷ প্রথম, 'ছেলেকে বাঁচাবে নাকি মেয়েকে! এমন দ্বিধাদ্বন্দে  মা জুই যখন ছেলেকে বাঁচানোর কথা বললেন, তখন যে পরিস্থিতি আপনার সম্মুখে দাঁড়াবে - সহজে আপনি তাকে সরিয়ে দিতে পারবেন না৷ দ্বিতীয়বার, যখন রতনকে তার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো এবং রতন মাকে ছেড়ে না গিয়ে ফিরে এলো মায়ের বুকে - সে দৃশ্য দেখে বুঝা যাবে সম্পর্ক ঠিক কাকে বলে। আর তৃতীয়বার, মা ও মেয়ের প্রণয় - অর্থাৎ শেষ দৃশ্যের আগের দৃশ্য৷
সব মিলিয়ে ন হন্যতে মোটামুটি ভালো একটি সিনেমা।
নির্মাতা রিংগো ব্যানার্জির প্রথম সিনেমা হিসেবে খানিকটা ভুলত্রুটি ছিলো বৈ কি! কিন্তু সে সব রেখে দিলে ভালো একটি গল্প বলার চেষ্টা করেছেন।

লিখেছেনঃ শাকিল মাহমুদ

No comments

Powered by Blogger.