শান্তিলাল, প্রজাপতি ও রহস্যের খোলা জিপার!
জিপার খুলে প্রজাপতি দেখানোর মতই রহস্যের জট তৈরী করে তা নিজেই খুলে দিয়েছেন নির্মাতা প্রতীম ডি গুপ্তা।
হ্যাঁ, তার 'শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য' নিয়েই দু কথা বলতেই মূলত উপরোক্ত বক্তব্যটি দেয়া।
একজন মধ্যবিত্ত ওয়েদার রিপোর্টার, 'দ্য সেন্টিনেন্টাল' পত্রিকায় চাকরী করেন শান্তিলাল। ফাঁকা জায়গা ভরতেই মূলত কাজে লাগানো হয় শান্তিকে। শহরের ওয়েদার যেমন তার উল্টো কথাই লিখতে হয় তাকে। কিন্তু শান্তির বিবেকে বাধে- কর্মের প্রতি সততা তাকে প্রশ্ন করে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধতা প্রকাশিত হয় অফিস-তুতো দাদার কাছে, মদের টেবিলে। এমন সময়ে হাজির হয় রহস্য, প্রজাপতি। কিন্তু তারও আগে রচিত হয় রহস্য। শান্তিলালের প্রফেশনাল জীবনের হতাশা এবং তার থেকে পরিত্রান পেতে ডিভিডিতে পর্ণ ভিডিও দেখতে দেখতেই এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তার মধ্যে একটি কৌতূহল জন্মায়। সে কৌতূহল দূর করতে শান্তির এক প্রকার চেষ্টা শুরু হয়। সিনেমার এ পর্যায়ে ভিন্ন একটি মাত্রা পেতে পারতো । কিন্তু ভুলভাবে চালিত হওয়ায় সে মাত্রা হারিয়ে যায় এবং এক ট্র্যাকে সিনেমাটিকে এগিয়ে নিয়ে যান নির্মাতা। ফলে সিনেমায় রহস্য আর রহস্য থাকে না।
সিনেমাটির রহস্য থাকুক কিংবা না থাকুক। প্রতীম ডি গুপ্তা খুব ভালোভাবেই সামাজিক ক্রাইসিসকে তুলে ধরেছেন। যেটি বিশ্লেষণ করতে গেলে সিনেমাটিকে দুটি অধ্যায়ে ভাগ করে নিতে হবে। এবং আমি সে অধ্যায়দ্বয়ের প্রথম অধ্যায় ধরবো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির তারকা নন্দিতা ও তার সিনেমা থেকে রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনাকে। একজন নারী অভিনয় থেকে রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছেন। তা নিয়ে সাংবাদিকদের উৎসাহের সঙ্গে একটি নাক সিটকানো ভাব এবং 'অফ দ্য উইমেন, বাই দ্য উইমেন, ফর দ্য উইমেন' আমাদের স্মাজ মেনে নিতে পারে না- শব্দদ্বয় সাংবাদিক ও আমাদের পুরুষশাসিত সমাজকে কড়া এক জবাব দেয়। কোনো পুরুষ অভিনেতা রাজনীতিতে আসলে তাকে বাহবা দিয়ে গ্রহণ করা হয় কিন্তু কোনো নারীকে খুব সহজে মেনে নেয় না! কেন? এমন একটি প্রশ্ন নির্মাতা আমাদের সমাজে ছুঁড়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় যে অধ্যায় সেটি উপস্থাপিত হয়েছে খেলোভাবে। শান্তি মূলত কিসের উপর স্টোরি করতে চায়? পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির উপর নাকি নন্দিতার অতীতের উপর? এমন প্রশ্নের দোলাচলে দুলে দেখা যায় নির্মাতার রহস্য পথ হারিয়ে ফেলেছে। যার ফলে শেষটায় ক্লাইমেক্স তৈরী হতে পারলেও মাঝ থেকে সেটা নাই হয়ে যায়। যে কারনে দর্শক হিসেবে আপনি সহজেই বুঝে যাবেন পরিণতি ঠিক কি!
অভিনয় প্রসঙ্গেঃ হতাশায় নিমজ্জিত সাংবাদিক শান্তিলাল চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তীর অভিনয় প্রশংসনীয়। কালো এক্তী অতীতের অধ্যায় উল্টে নতুন একটি পরিচয় নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তৈরী করতে চাওয়া একজন অভিনেতা ও রাজনীতিতে আগ্রহী নন্দিতা চরিত্রে পাওলি দাম মানাসই। আবেগ দিয়ে চরিত্রটিকে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। দুটি চরিত্রের সিনেমাটিতে মুখ্য কাজ ঋত্বিক ও পাওলিকে করতে হলেও বাকি চরিত্রগুলো নিজেদের মত করে দুটো চরিত্রকে সহায়তা করে গিয়েছে।
মন্তব্যঃ আমি বরাবর অভিনয় ছাড়াও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে দু/চার কথা লিখি। কিন্তু প্রতীম ডি গুপ্তার বাকী সিনেমার মত এ সিনেমার ক্ষেত্রেও একই কথা বলতেহবে। তাই কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মন্তব্যেই এসে গেলাম। তবে মন্তব্যেও বাড়তি কথা বলবো না। সোজাভাবে বলবো, রহস্যটি দর্শকের জন্য রাখতে পারলেই ভালো হতো। শান্তিলালের মত দর্শক একটু প্রজাপতির পিছনে ছুটতো, কোনো দিশা পেলে ট্রাম কার্ডের মত ব্যবহার করতে পারতো। সে যা হোক, প্রথম অধ্যায়ে বাচ্চাসুলভ উপস্থাপন হলেও দ্বিতীয় অধ্যায় দিয়ে প্রতীম ডি গুপ্তা 'শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য'কে কোনো রকমে পারে তুলেছেন। তবে প্রজাপতির রহস্যটি রহস্য না থাকায় একরাশ হতাশা নিয়েই আমি লেখার ইতি টানলাম।


No comments