ধ্বংস হোক সংস্কৃতি অঙ্গন - এটাই কি পরোক্ষভাবে বলছে সরকার?




ঈদকে ঘিরে টেলিভিশন নাটকে ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য থেকে এ বছর ইন্ডাস্ট্রি বঞ্চিত।
অথচ, টেলিভিশন নাটক থেকে শুরু করে গোটা সংস্কৃতি অঙ্গনে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে - তা কাটিয়ে উঠতে সরকারী কোনো পৃষ্ঠপোষকতা এখনো পাওয়া যায় নি আর যাবে কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই৷ কিন্তু একই সংকটের কারণে গার্মেন্ট সেক্টরে সরকার ইতোমধ্যেই ১৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে, যা দিয়ে সেক্টরটি এই সংকট নিরসনে খানিকটা হলেও উতরে যেতে পারে।
আমাদের টেলিভিশন নাটক বলুন কিংবা গোটা সংস্কৃতি অঙ্গন - আমরা কখনোই লাভজনক একটি অবস্থান সরকারের কাছে যেমন তুলে ধরতে পারি নি। তেমনই একটি সংস্কৃতি মনোভাব বিচ্ছিন্ন সরকারের কাছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের চেয়ে গার্মেন্ট সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি কোনো বিষয় না - বিবেচনাতেই টেলিভিশন নাটককে ধ্বংসের শেষ সীমানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ 
আমরা বরাবর-ই টেলিভিশন নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলি। কিন্তু সাম্প্রতিক এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রি করোনা পরবর্তী সময়ে হয়তো হাটতে শুরু করবে। কিন্তু সে যে পথে হাটবে তা সম্পূর্ণ ভুল পথ। মানহীন বস্তাপঁচা নাটক নির্মিত হবে বিপুল হারে। নাটকের মানের চাইতে বিবেচ্য উঠবে সংখ্যা। যে সংখ্যা ঘটে যাওয়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে টেলিভিশন নাটক ধ্বংস হতে চলেছে, গুণগত মানের বিচারে৷ 

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সমস্ত অঙ্গনের মত দেশের মঞ্চ নাটকও বন্ধ হয়ে আছে৷ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো মানুষগুলো আর সন্ধ্যায় শিল্পকলায় নাটক করতে পারে না। মঞ্চের মানুষগুলোকে বেঁচে নাট্যাঙ্গনের বড় বড় সংগঠনগুলো এতকাল টাকা এনে এনে নিজেদের পকেট ভারী করতো। তবুও থিয়েটার দলগুলোর, সদস্যদের কোনো অভিযোগ ছিলো না ; ঘরে তো ভাত আছেই - খেয়ে এসে বনের মোষ তাড়ানো যাবেই। 
সেই বনের মোষ তাড়ানো মানুষগুলো যখন ঘরবন্দি। কাজ নেই, ঘরে খাবারও নেই কারো কারো - তখন থিয়েটারের শীর্ষ সংগঠনগুলো মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। মাঝে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন একটি তালিকা করলেও গত মাস মাস খানেক তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। 
গত তিন মাসে তারা নাট্যকর্মীদের পাশে তারা এসে দাঁড়ান নি। সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় পর্যন্ত খোঁজ নেন নি - কিভাবে আছে এই বনের মোষ তাড়ানো মানুষগুলো। 
এখন করোনা পরবর্তী সময়ে যখন ঘরে খাবারা থাকবে না তখন কি কেউ বনের মোষ তাড়াতে আসবে?  খাবারের খোঁজটাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ালে থিয়েটার দাঁড়াবে গিয়ে কোথায়? কর্তা ব্যক্তিরা একটি বারও ভেবেছেন সে বিষয়? 

একই কথা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও। সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় লাপাত্তা। সিনেমা সংশ্লিষ্ট বড় বড় সংগঠনগুলো কেবল পোটলা ভরে ইফতার দেয়া নিয়ে ব্যস্ত। ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ কি সে ভাবনায় নেই তাদের কোনো হদিস। এ সময় মন্ত্রনালয় সহ বড় বড় সংগঠনগুলো কেবল নামেই সংগঠন হয়ে গেছে। সংকটকালে টিকি-টি পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি! তার কথা নাই-ই বা বলি। রাজনীতির যাঁতাকলে তার মৃত্যু ঘটেছে আগেই৷ তাই এটা খোঁজ কেউ রাখে না, প্রয়োজনও বোধ করে না।  সংস্কৃতি অঙ্গনের যে ক্ষতি হয়ে গেলো, সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার কি তাহলে কোনো ব্যবস্থায়-ই গ্রহন করবে না? ধ্বংস হয়ে যাক সংস্কৃতি - এটাই কি পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে? 

২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা৷ যার মধ্যে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ মাত্র ৫৫৭ কোটি টাকা৷ যা গত বাজেটের থেকে ৮ শতাংশ কম। অথচ মোট বাজেটের ৬ দশমিক  ১ শতাংয় বরাদ্দ হয় সামরিক খাতে৷ 
দেশের সামরিক খাতকে উন্নত করতে ৩২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। 
একটি দেশে সংস্কৃতি খাতকে বাদ যাচ্ছেতাইভাবে রেখে সরকারের নজর যখন দেশের সামরিক খাতে, অস্ত্র, গোলাবারুদ কেনায় ব্যস্ততা - তখন সংস্কৃতি অঙ্গন এতদিন টিকে আছে কেবল এ অঙ্গনের মানুষের ভালোবাসায়৷ কিন্তু এবারের সংকট কি সে ভালোবাসা দিয়ে কাটিয়ে উঠা সম্ভব? 

অস্ত্র আর গোলাবারুদে, টাকা ঢেলেছো কাড়িকাড়ি 
মহারাজার মুখে মুখে ভালোবাসা, আসলে সংস্কৃতির প্রতি রাগ তার ভারী৷ 

মরে যদি যাক না 
কি আসে যায়? 
নাচ-গান করে যে হারামজাদায়! 

তাহলে মরেই যাক হারামজাদারা!

লিখেছেনঃ শাকিল মাহমুদ

No comments

Powered by Blogger.