ব্রহ্মদৈত্য : বর্তমান সময়ে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি ভূতের গল্প!

 

ব্রহ্মদৈত্য চলচ্চিত্রের পোস্টার 

চলচ্চিত্রঃ ব্রহ্মদৈত্য


পরিচালকঃ অভিরূপ ঘোষ


অভিনয়েঃ সায়নী ঘোষ, রুদ্রনীল ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়


রিলিজঃ ১১ সেপ্টেম্বর (হইচই)


বর্তমান সময়ে পশ্চিমবঙ্গে যে কয়েকজন সম্ভাবণাময় তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার আবির্ভাব ঘটেছে তার মধ্যে অভিরূপ ঘোষ একজন। 


তার প্রথম কাজ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই'র মাধ্যমেই। সেই কাজটি ছিলো রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ।

প্রথম সিরিজের ব্যাপক সফলতার পর এই সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিও এসেছিলো। 


যায়হোক, আজকে যেহেতু 'ব্রহ্মদৈত্য' দেখলাম সেহেতু এই ওয়েব-ফিল্মটা নিয়েই কথা বলা যাক। 


আমাদের বয়সের যারা আছে তাদের প্রায় সবাই-ই ঠাকুমার ঝুলি দেখে বা পড়ে বড় হয়েছি। ঠাকুমার ঝুলি'র গা ঝমঝম করা অনেক ভূতের গল্প আছে, যা আমাদের ছোটবেলায় ভয়ের সাথেসাথে অনেক বিনোদনও দিতো। 


সেখানে শাঁকচুন্নি, মামদো ভূত, গেছো ভূত, ঝেঁউ পেত্নী এবং ব্রহ্মদৈত্যের মতো নানানরকমের ভূতের দেখা মিলতো।  

সিনেমার একটি দৃশ্যে সায়নী ঘোষ

'ব্রহ্মদৈত্য' সিনেমাটি মূলত বাংলা সাহিত্যের ব্রহ্মদৈত্য'র উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে। বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা ভিনদেশী কার্টুন বা জম্বি, ভাম্পায়ার, ড্রাকুলা ইত্যাদি সমন্ধে জানলেও আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভূতেদের সাথে তাদের কোনো পরিচিতি নেই। 


অভিরূপ ঘোষ দারুণভাবে গল্পটি ভিজ্যুয়ালি পরিবেশন করতে পেরেছে। খুবই অল্প বাজেটে নির্মিত হলেও এই সিনেমার চিত্রনাট্য এবং ভিজ্যুয়াল কোনো বড় বাজেটের  হরর সিনেমার থেকে কম উত্তেজনা দিবেনা আপনাকে।

 

বরং কম বাজেটে, বাংলার ভূতকে নিয়ে এত দারুণ একটা সিনেমা নির্মাণের জন্য অভিরূপ ঘোষের তারিফ করা দরকার। 


বর্তমান সময়ের তরুণদের কথা মাথায় রেখেই হইতো অভিরূপ ঘোষ এই বাঙালি ভূতের গল্পটি বলেছে। 


ভূতের গল্পের সাসপেন্স এবং থ্রিলের সাথে সাথে দারুণভাবে একটা শিশু বুলিংয়ের গল্পও তুলে ধরেছেন নির্মাতা।


সিনেমার গল্পটি নিয়ে একটু কথা বলা যাক- 

সায়নী ঘোষ যে কিনা একটি কোম্পানিতে চাকরী করে।  একদিন হঠাৎ রাত্রে সায়নির মেইল ইনবক্সে একটা ম্যাসেজ আসে, সেই ম্যাসেজে 'ঘোস্টডটকম' নামের একটা সাইটের নাম দেওয়া থাকে। সেখান থেকে একদম রসিকতার ছলেই তার বন্ধুর কথায় অর্ডার করে 'ব্রহ্মদৈত্য'। তারপর যথারীতি তার বাড়িতে হোম ডেলিভারি দেওয়া হয় পার্সেল। 

তারপর খুন, নানারকম অদ্ভূতুড়ে ঘটনার সাক্ষী হতে হয় তাঁকে। শুরু হয় উপদ্রব, প্রাণের ভয়…!

পালিয়ে কী আর ঘাড় থেকে ‘ব্রহ্মদৈত্য’কে নামানো যায়? 

চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে রুদ্রনীল ঘোষ   

মূল চরিত্রে সায়নী ঘোষ খুবই দারুণ অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় দর্শকদের মনে টেনশন জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। পাশাপাশি স্বল্প সময়ে তান্ত্রিকের চরিত্রে নজর কেড়েছেন রুদ্রনীল ঘোষও। সামান্যকয়েক মিনিট সময়ে আমি মনে করি ফাটিয়ে দিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। 


খুবই অল্প বাজেটে এবং অল্প কাস্টিং-এ দারুণভাবে বাঙালি ‘ব্রহ্মদৈত্য’র গল্প বলতে সক্ষম হয়েছেন অভিরূপ ঘোষ। সিনেমাটি দেখা শুরু করলে সাসপেন্স এবং থ্রিলের সাথে সাথে যে কিভাবে সময় কেটে যাবে তা বুঝতেই পারবেন না। 


সিনেমাটি খুব সহজেই হইচই'তে পেয়ে যাবেন। 

তো দেরী না করে দেখে নিতে পারেন। 


© হৃদয় আহমেদ

No comments

Powered by Blogger.