তিকি-তাকা : হলুদ ট্যাক্সিতে চড়ে কলকাতা ছাড়িয়ে আবেগের শহরে!
কলকাতা। নস্টালজিয়া হলুদ ট্যাক্সি - অ্যাপ ক্যাবের ভিড়ে এক ভিন্ন স্মৃতি নিয়ে শহরের বুকে চড়ে বেড়াচ্ছে এখনো। কুমার শানু; তার গান, ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক ভিন্ন ভুবনে। ইলিশের ঘ্রাণ আর চিংড়ির শরীরের মাঝেও বাঙালী আরেকটি বিষয়ে ছাড় দেয় না কখনো। তা হলো ফুটবল। মোহনবাগান কিংবা ইস্ট বেঙ্গল - ধুর, নতুন বাগান বা ইয়াং বেঙ্গলের ডার্বি ম্যাচ নিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে, পুজো পাঠে ঠাকুরের কাছে প্রিয় দলের জয়ের জন্য প্রার্থনা; যেনো বাঙালীর নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে আছে যুগ যুগ ধরে।
এত সব স্মৃতিময় বিষয় বস্তুর সম্মিলনে নির্মাণ হলো নতুন সিনেমা তিকি-তাকা। প্রথমে 'খেলেছি আজগুবি' হলেও নির্মাতার খেয়াল খুশিতে নাম পাল্টালো। শুধু কি নাম? নিজেকেও ভেঙ্গেচুরে সিনেমায় রাজু চরিত্রের ট্যাক্সি ড্রাইভার হয়ে হাজির হলেন নির্মাতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। পুরো গল্পকে নিয়ে হলুদ ট্যাক্সিতে করে ঘুরলেন কলকাতাময়। তবে সে গল্পে তিনিই নন শুধু, সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গরীব দেশ সেনেগাল থেকে আসা খেলেছি, রয়েছেন অফিসের বসের কামাতুর দৃষ্টি। স্পর্শ থেকে বাঁচতে ব্রেকিং সংবাদ খুঁজতে বের হওয়া বনলতা কিংবা বনি। এখানেই তো শেষ নয়, সিনেমার থার্ড অ্যাঙ্গেল পিকে।
সৌভিক ব্যানার্জি ও রোহান ঘোষের লেখায় দুর্দান্ত ভাবে গল্প বলে গেছেন প্রতিটা চরিত্র। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, চেনা পরিচিত পরমকে দূরে সরিয়ে রেখে ট্যাক্সির স্টিয়ারিং ধরে নিয়ন্ত্রন রেখা ড্রাইভিং করার মতই অভিনয় করে গেলেন। সাংবাদিক বনি চরিত্রে ঋতাভরী চক্রবর্তী নিজেকে মেলে ধরেছেন সবটুকু দিয়ে। পিকে চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় দেখিয়েছেন ধামাকা। বরাবরই তিনি চরিত্রের চমক নিয়েই হাজির হন। তার ব্যতিক্রম এবারও ঘটে নি। ঋদ্ধি সেন ও সুরাঙ্গনা বন্দোপাধ্যায় সিনেমাত স্পেশাল ভাবে আগমন করেন। তবে স্পেশাল যে বরাবর স্পেশাল হওয়া উচিত তা এ দুটি চরিত্র দেখিয়েছেন।
সিনেমায় প্রাণ দিয়েছেন পরাণ বন্দোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখার্জী এবং কাঞ্চন মল্লিক।
তবে গোটা দেহটা ছিলেন সেনেগালের অভিনেতা ইমোনা এনাবুলু। এনাবুলুকে নিজের মত সাজিয়েছেন নির্মাতা পরম। আর এখানেই নির্মাতার মুন্সিয়ানার একাংশ দেখিয়েছেন তিনি।
সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকা নীল দত্ত ও অর্ক মুখোপাধ্যায়কে বিশেষ ধন্যবাদ দেয়া ছাড়া আর কিছু নেই। তবে গোটা কলকাতাকে দৃশ্যকাব্যে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্বে থাকা রবি কিরণ অনবদ্য।
অভিনেতা, নির্মাতা দুটোতেই নৈপুণ্য দেখানো পরমব্রতকে নিয়ে আলাদা করে বলার কি আছে? অনেক কিছুই হয়তো আছে কিন্তু না বলা-ই বরং ভালো। তারচেয়ে বরং সে নিজেকে ভেঙ্গেচুরে গুঁড়ো করে ফেলুক এবং নতুন করে ফিরে আসুক।
সিনেমা কিংবা জীবনে যত অ্যাঙ্গেলই থাকুক না কেনো, দিন শেষে মাছে-ভাতে বাঙালী ফুটবলের প্রেমে মজবেই।
চায়ের কাপ থেকে ঠাকুরের সামনে বসে পুজো পাঠ ফুটবল ছাড়া যেনো সব পানসে!
সব বিলিয়ে দিন শেষ আর শুরু নেই, তিকি-তাকা হোক আর খেলেছি আজগুবি - কলকাতা, হলুদ ট্যাক্সি, কুমার শানুর সুর, ইলিশ-চিংড়ি আর ফুটবল; বাঙালী একে অন্যের অবিচ্ছেদ অংশ। যেনো জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন।
রিভিউ লিখেছেনঃ শাকিল মাহমুদ

No comments