গেরিলা - একজন একাত্তরের বিলকিসের গল্প!

 

'গেরিলা' চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে জয়া আহসান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং নারী কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রগুলোতে নারীকে কখনো যোদ্ধা হিসেবে কখনো বা যোদ্ধার মা বা বোন বা সহধর্মিণী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। তবে সেই বিংশ শতাব্দীতে নারীকে একই সাথে শিক্ষিত- কর্মজীবী আবার সাহসী যোদ্ধা আবার ঘরের গিন্নীও হিসেবেও সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন যে কজন সুখ্যাত নির্মাতা তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবেন নাসিরুদ্দীন ইউসুফ। 

 সৈয়দ শামসুল হক রচিত, 'নিষিদ্ধ লোবান' এর কাহিনী অবলম্বনে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র 'গেরিলা'।  'গেরিলা' সাড়া জাগিয়েছিল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব মহলেও। ঝুলিতে কুড়িয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কারসহ ১৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র পুরষ্কার এর নেটপ্যাক পুরষ্কার। 

ব্যাংকার বিলকিসের ফেলে আসা সুখকর সময় আর বর্তমানের যুদ্ধ ভয় দিয়ে শুরু হয় সিনেমার মূল কাহিনী। সাংবাদিক স্বামী হাসান নিখোঁজ পঁচিশে মার্চ থেকে। স্বামীর দুশ্চিন্তা, ঘরে অসুস্থ শাশুড়ি, পাড়ার পা চাটু রাজাকার বাহিনী - সব মিলিয়ে একটি গতানুগতিক যুদ্ধের ছবির আমেজ পাওয়া যায়। তবে চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া চরিত্র তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলকিসকে তিনভাবে বর্নণা করলে পাঠকদের সুবিধা হবে বলে বোধ করি। 

বিলকিস একজন বাঙালী সাহসী এবং শিক্ষিত নারী। যিনি পরনে শাড়িকে বেছে নিলেও পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যাংকিং যা হয়তো সেই প্রেক্ষাপটে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজের অনেক ছেলের জন্যও আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া চাকুরি। শাশুড়ির গঞ্জনা সত্ত্বেও একা হাতে সামলেছেন ঘর ও বাহির।

বিলকিস একজন একই সাথে প্রেমময় ও শক্তিশালী নারী চরিত্র। হাসান এবং বিলকিসের ভালবাসার দিনগুলো যেকোনো মানব মন আন্দোলিত করে তুলবে। ট্রেনের কামড়ার সেই মুহূর্ত কিংবা নৌকার আড্ডা কিংবা একান্ত নিরালায় দু'জনের খুনসুটি। সেই উত্তাল প্রেমের দিন গড়াতে না গড়াতে জীবনে যে কালো ছায়া নেমে আসে তাতে আবেগকে দমন, সত্যকে মেনে নেওয়া, একা হাতে কাজ চালিয়ে যাওয়া, একের পর এক অনিশ্চিত জয়ের ঝুঁকি হাতে তুলে নেওয়া বিলকিসকে নব্বই দশকের যেকোনো নারী চরিত্রের চাইতে করে তুলেছে স্বতন্ত্র।

বিলকিস একজন দেশ প্রেমিক নারী সত্ত্বা। নারীকে বরাবরই মমতাময়ী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। হয়তো সেটা কিঞ্চিৎ সত্যও বটে। তবে আধুনিক চলচ্চিত্রগুলোতে নারীর এই কোমলতা, হৃদয় নিংড়ানো ভাবাবেগকে কেনো যেনো লেখক কিংবা পরিচালকেরা খুব বেশি বিস্তৃত করেননি কিংবা করতে পারেননি। সৈয়দ শামসুল হক একই সাথে নাসিরুদ্দিন ইউসুফ এক্ষেত্রে বেশ খানিকটা সফল স্বীকার করতে হয়। বিলকিস নিজেকে আত্মহুতি দিয়েছেন দেশের স্বার্থে। বুকে পাথর চেপে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে স্বামীর নিখোঁজ হওয়া, ভাইয়ের শহীদ হওয়ার সংবাদ, যাত্রী সঙ্গী সিরাজের মৃত্যুর প্রত্যক্ষ দর্শন। দেশের জন্য আত্মবলিদানেও বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। 


তিনি একজন একাত্তরের বিলকিস!


লিখেছেনঃ যারিন তাসনিম যুথি

No comments

Powered by Blogger.