জীবনের পরিণতিতে কখনো সুখ কখনো বা দূঃখ!



ঢাকা। স্বপ্নের শহর। তবে সে স্বপ্ন কর্পূরের মত মিলিয়ে যায় শহরের কংক্রিটের পথে পা ফেলতে না ফেলতেই। 

কিন্তু সে স্বপ্নকে শহরের অলিতে গলিতে খুঁজে বেরিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে দিনের পর। কেউ কেউ হারিয়ে যায় পথেই। 

যখন গ্রামে ছিলাম ; খুব বেশি সময় না, বছর পাঁচেক কিংবা দশেক আগের কথা। ধারদেনায় গলা অবদি ডুবে গিয়ে বেঁচে থাকার সন্ধানে দূর সম্পর্কের এক চাচা তার গোটা পরিবার নিয়ে রাতে আঁধারে পাড়ি জমান শহরে। অবশ্য তিনি মিলিয়ে যান নি। শহরে এসে নানা রকম ছোট ব্যবসায় জড়িয়ে গেছেন সে চাচা। স্ত্রীকে জুটিয়ে দিয়েছেন ঝি-এর কাজ। আর ছেলেমেয়েগুলোকেও লাগিয়ে দেন টাকা আয়ের পথে। গ্রামের দেনা অবশ্য অনেক আগেই শোধ করে দিয়েছেন। এখন বেশ দিব্যিই আছেন তারা। তাদের শহরে আগমনী গল্প খানিকটা সুখকর হলেও সবার ক্ষেত্রে সুখকর হয় না। 

প্রতারকের খপ্পরে পরে সর্বস্ব হারিয়ে রাত কাটানোর জন্য ঠাঁই হয় ময়লার ভাঁগাড়ের পাশে। কিংবা কষ্টে কোনো রকমে একটা চাকরি জুটিয়ে নিতে পারলেও জীবন বাস্তবতার পথ-পরিক্রমায় পরিবর্তনের মোড়ে এসে ভিন্ন দিকে এগিয়ে যেতে হয়। সে পথে কখনো কখনো জীবনের ইতি ঘটে। 

তেমনই এক গল্পের দৃশ্যায়ন হয়েছে সিটি লাইটস নামক সিনেমায়। 

রাজস্থানের বাসিন্দা দীপক সিং। দেনার দায়ে দোকান হারিয়ে মুম্বাই শহরে আসেন স্ত্রী রাখি ও মেয়ে মাহিকে নিয়ে। ওই যে শহর, স্বপ্নের শহর। কিন্তু অজোপাড়া গায়ের দীপক কি করে জানবে তার দেখা স্বপ্ন শহুরে বাতাসে ঠিকমত দম নিতে পারবে না! 

তবু সর্বস্বহারা মন ছুটে চলে বেঁচে থাকার আশার পিছু। 

সে মরীচিকা হোক বা অন্য কিছু। 

জীবন বাস্তবতার টানাপোড়েনের মধ্যে জুটে যায় চাকরী। সিকিউরিটি কোম্পানীর একটা চাকরী পেয়ে যায় দীপক। এখানেও জীবনের ভিন্ন এক মানে তুলে ধরেন নির্মাতা৷ ১৫ হাজার টাকার চাকরীতে কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতে বাজি রাখতে হয় জীবন। 

এদিকে তার স্ত্রীও চাকরী পেয়ে যায়। জীবনের বাঁকে বাঁকে ভিন্ন মানে, ভিন্ন বাস্তবতার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ সিটি লাইটস। চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে তা তুলে ধরেন নির্মাতা। 

তবে জীবনের মোড় ঘুরতেই আরেক বাস্তবতায় কি ফুটে উঠে তা যেমন জীবন দিয়ে বুঝিয়ে যান কেউ কেউ তেমনই দর্শককে মোড় ঘুরে তা অবলোকন করার জন্য সিনেমা দেখতে হবে। 

শেন অ্যালেসের মেট্রো ম্যানিলা থেকে অ্যাডাপ্ট করে রিতেশ শাহ সিটি লাইটসকে দাঁড় করান। সেটিকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করেন হানসেল মেহেতা। জীবন বাস্তবতার পরতে পরতে মানুষের যে যুদ্ধ তার এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলেছেন নির্মাতা৷ যে খেলায় নির্মাতার পারফরম্যান্স দূর্দান্ত। তবে এ কৃতিত্বের আশি শতাংশ অভিনেতাদের। বিশেষ করে দীপক সিং চরিত্রের রাজকুমার রাও এবং রাখি চরিত্রে পত্রলেখা পাল অনবদ্য অভিনয় করে বেঁচে থাকার আশায় একদল স্বপ্নবাজ মানুষের জীবন যুদ্ধকে জীবন্ত আকারে আলো ছায়ার খেলায় ফুটিয়ে তুলেছেন। 

সিনেমার আরো একটি শক্তিশালী অংশ গানগুলো। জিৎ গাঙ্গুলী ও মোহাম্মদ ইরফানের গাওয়া গানগুলোও আলাদা করে জীবনের মানে খুঁজে পেতে দর্শককে সাহায্য করে৷ 

গল্প, অভিনয়ের কাছে সিনেমার দৃশ্য ম্লান হতে হতেও হাত জাগিয়ে মাঝেমধ্যে জানান দিয়েছে নিজের অস্তিত্ব।  

শেষমেশ একটি কথাই এ সিনেমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জীবন সমান্তরাক কোনো রেখা নয়। আঁকাবাঁকা জীবন, তার প্রতিটা বাঁকেই সংগ্রাম, বেঁচে থাকার জন্য একরাশ স্বপ্নের হাতছানি এবং পরিণতি ; সুখের কিংবা দূঃখের।

© শাকিল মাহমুদ

No comments

Powered by Blogger.