মেট্রোপলিস : সাইন্স ফিকশন সিনেমার ইতিহাসে এক মাইলফলক!

 


Metropolis, এক ভবিষ্যত নগরী। যেখানে রয়েছে সুউচ্চ প্রাসাদতুল্য ভবন, স্বর্গেরন্যায় উদ্যানসমূহ, আধুনিক জীবনব্যবস্থা। এখানে বসবাস দুই শ্রেনীর মানুষের। এক শ্রেনী যারা ধনী, আর আরেক শ্রেনী যারা শ্রমিক। ধনীরা যেখানে বাস করে শহরের সুউচ্চ সুউচ্চ ভবনে। সেখানে শ্রমিকরা বাস করে শহরের নিচে, পাতালে৷ ধনীরা শহরের স্বর্গদ্যানে আয়েশ করে বেড়ায় আর শ্রমিকরা পাতালে খেটে মরে৷

সেই বিচিত্র শহর Metropolis এর নগরপ্রধানের পুত্র ফ্রেডার, যে কিনা শহরের অন্ধকার জগত সম্পর্কে অজ্ঞাত। একদিন উদ্যানে সময় কাটানোর সময় তার সাথে দেখা হয় এক রহস্যময়ী নারী মারিয়ার সাথে৷ প্রথম দর্শনেই মারিয়ার প্রেমে পড়ে যান ফ্রেডার। বেড়িয়ে পড়েন মারিয়ার খোঁজে এবং আবিষ্কার করেন মেট্রোপলিসের অন্ধকার জগত। 

সেই রহস্যময়ী চরিত্র মারিয়া একজন ধার্মিক যুবতী, শ্রমিকদের নীতিপ্রদর্শক। মারিয়া বলে সমতার কথা, ভ্রাতৃত্বের কথা। মারিয়া শ্রমিকদের আশ্বাস দেয় সোনালী দিনের, যেদিন ধনী আর গরিবের বৈষম্য দূর হবে। যেদিন একজন মহাপুরুষ আসবেন যিনি শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ঘটাবেন। কেননা মস্তক আর হস্তের সংযোগস্থাপনে একটি হৃদয়ের প্রয়োজন........ 


ফ্রেড্রার আর মারিয়ার এই পবিত্র ভালোবাসা, শ্রমিক ও শহরবাসীর বৈষম্যে, এক মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্থ এক বিজ্ঞানী ও তার আবিষ্কৃত এক ম্যাশিনম্যান নিয়েই শুরু হয় মেট্রোপলিসের মহাকাব্যিক সূচনা। 


আসলে Metropolis সিনেমা নিয়ে যতই বলা যায় ততই কম। এইরকম প্লট, সেট ডিজাইন, স্পেশাল ইফেক্ট, সিনেমাটোগ্রাফী তৎকালীন মানুষের জন্য বিশাল ব্যাপার। মেট্রোপলিস শুধুমাত্র একটি বিজ্ঞানের কল্পকাহিনী নয়, মেট্রোপলিস শিক্ষা দেয় ভ্রাতৃত্ববোধের, মানুষের সমতার, মানুষের অধিকারের, শুভশক্তির বিজয়ের। মেট্রোপলিস এমন সময়ে মুক্তি পেয়েছিল যখন পৃথিবী কেবলমাত্র চলচ্চিত্রের সাথে পরিচিত হয়েছে। কম্পিউটার, স্পেশাল ইফেক্ট, মেশিনম্যান এর মত শব্দ অভিধানে আসেনি। তখনকার সময়ের সিনেমায় এমন জাকজমক সেট, অত্যাধুনিক প্লট মানুষকে বিস্মিত করে। 

আর একজনের প্রশংসা না করলেই নয়, তিনি হচ্ছেন মারিয়া চরিত্রে অভিনয় করা Brigitte Helm. একই সাথে তিনি যেভাবে দ্বৈত চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।


১৯২৫ সালে মুক্তি পাওয়া Thea von Harbou এর "মেট্রোপলিস" উপন্যাস থেকে মেট্রোপলিস সিনেমা এডাপ্ট করা হয়। দীর্ঘ দুইবছর চলে শ্যুটিং এর কাজ। পরে ১৯২৭ সালে মুক্তি পায় মেট্রোপলিস নামের ঐতিহাসিক এই সিনেমা৷ মুক্তির পর সিনেমাটি খুব একটা ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। যেখানে মুভির বাজেট ছিল ৫ মিলিয়ন রেইচ (তৎকালীন জার্মান কারেন্সি), তার বিপরীতে মুভিটি ৭৫০০০ রেইচমার্ক্স আয় করে মুখ থুবড়ে পড়ে। একসময় কালের বিবর্তনে হারিয়েও যায়৷ বহুবার এই সিনেমার বহু ভার্শন রিলিজ হয়েছে, তবে কোনবারই পূর্ণ চলচ্চিত্র আবিষ্কৃত হয় নি। সর্বশেষ ২০০৯ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী Buenos Aires এর একটি সিনেমা-জাদুঘরে এ সর্বোচ্চ রানটাইমের ভার্শন আবিষ্কৃত হয়।


মেট্রোপলিস সিনেমা ইতিহাসের একটি মাইলফলক।

বর্তমানের বহু সাইন্স ফিকশন সিনেমা কোন না কোন ভাবে মেট্রোপলিস থেকে অনুপ্রানিত৷ যুগে যুগে এই সিনেমা সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে আসছে এবং তা অর্জন করবে সুদূর ভবিষ্যতেও৷ বহুবছর ধরে যে সিনেমা মানুষকে মুগ্ধ করে, যে সিনেমা সব প্রজন্মের কাছেই এক বিস্ময়, যেই সিনেমা নিয়ে মানুষ চর্চা করে আসছে যুগের পর যুগ সেটাই তো ক্লাসিক সিনেমা, তাই তো মাস্টারপিস। জার্মান এই মাস্টারপিস সিনেমা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে শত শত বছর ধরে।


Metropolis (1927)  

🎬 Genre: Drama, Sci-Fi, Romance

💁 Director: Fritz Lang

🚩 Country: German

⏰ Runtime: 148 minutes

🎎 Cast: Brigitte Helm, Alfred Abel, Gustav Fröhlich

🎬 IMDb: 8.3

🍅 Rotten Tomatoes: 97%

♏ Metacritic: 98 


লিখেছেনঃ আমিনুল ইসলাম সিয়াম

No comments

Powered by Blogger.