সেক্স এডুকেশনে আমরা কি শিখছি?

 

 

সেক্স এডুকেশন! আমাদের উপমহাদেশীয় চোখ থেকে দেখলে এটি খুব অপ্রস্তুত করার মত শব্দ। আপনি সবার সামনে সেক্স শব্দটি বলতে একটু হলেও আটকে যাবেন, সে আমরা যতই প্রোগ্রেসিভ হই না কেন! আর যদি সামনে কোন মুরুব্বী থাকে তাহলে তো কথাই নেই! সে তো গেল সামাজিক ট্যাবুর কথা, কিন্তু সেক্স এডুকেশন সিরিজের কথা আসলে সেই ট্যাবু কেন জানি কেউ মাথায় নেয় না। যৌন দৃশ্যের কারণেই হোক, আর ভরপুর ড্রামাই হোক; ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত এই টিন ড্রামা সিরিজ লাভারদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় হয়ে দাড়িয়েছে। সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। প্রায় সকল সিরিজ লাভারদের কাছেই সেক্স এডুকেশন খুব জনপ্রিয় একটি সিরিজ। তবে সব কিছুর মত এই সিরিজ এর কাছেও এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

অনেকের কাছে সেক্স এডুকেশন খুব মজাদার একটি কন্টেন্ট হলেও, অনেকের কাছে এটি একটি ইরটিক সিরিজ ছাড়া আর কিছুই না! 

সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় কে যেন লিখেছিল সেক্স এডুকেশনে অশ্লীল দৃশ্য ছাড়া আর কিছুই নেই, এর চেয়ে কোটা ফ্যাক্টরী দেখা ভাল। এখন কোটা ফ্যাক্টরি কেমন সিরিজ, এখানে অশ্লীল দৃশ্য বা যৌন দৃশ্য না থাকার কারণে কেন সেটা সেক্স এডুকেশন থেকে ভাল সিরিজ, সেক্স এডুকেশনের সাথে আদৌ কোটা ফ্যাক্টরীর কোন তুলনার জায়গা আছে কি না এই কথা ভাবার কোন ইচ্ছা সেই লেখনীতে ছিল না। সেক্স এডুকেশন খারাপ মানে খারাপ, কথা শেষ, ফুল স্টপ।

কোটা ফ্যাক্টরী কতটুকু শিক্ষণীয় সে গল্প অন্য কোন দিন করি। আজকে আমরা নাহয় জানি সেক্স এডুকেশন বা এই অশ্লীল দৃশ্যে ভরা সিরিজটিতে কি আদৌ শেখার কিছু আছে কি না!     

গল্পের দিকে তাকালে আমরা যা দেখি ওটিস এবং মেইভ নামক দুই ২ হাইস্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী মিলে একটি গোপন সেক্স ক্লিনিক গড়ে তোলে, যেখানে তারা তাদের সহপাঠীদের সেক্স লাইফ নিয়ে নানা সমস্যার সমাধান করে দেয়। ওটিসের মা যেহেতু একজন সেক্সোলজিস্ট; সেই কারণে সেক্সুয়াল নানাবিধ সমস্যা নিয়ে তার ভাল জানাশোনা ছিল। এ ব্যাপারে তার বান্ধবী মেইভও তাকে সাহায্য করে। কিন্তু এই গোপন সেক্স ক্লিনিক খুব বেশিদিন গোপন থাকে না, আস্তে আস্তে সেটি শিক্ষক হতে শুরু করে প্রিন্সিপাল অবধি চলে যায়। স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী মিলে সেক্সুয়াল সমস্যা নিয়ে কথা বলছে, ব্যাপারটা শুনতে সবার নোংরাই লাগে। যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ওটিসমেইভের সেক্স ক্লিনিক। না গল্প এখানেই শেষ হয় না। বরং গল্পের শুরু এখানেই। ওটিস ও মেইভ সেক্স বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া বন্ধ করলেও তার প্রভাব রয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সত্যি কথা বলতে মুড়ডেল হাইস্কুলের সেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের সেক্সুয়াল সমস্যা জানার পাশাপাশি তাদের ভিতরকার প্রতিবন্ধকতাগুলো আস্তে আস্তে বোঝা শুরু করে। তারা আসলে কিভাবে সুখী হতে পারে সেই জিনিসগুলো জানা শুরু করে, তারা বুঝতে পারে কোনটা আসলে স্বাভাবিক আর কোনটা স্বাভাবিক না। টিনেজ বয়সেই মানবশরীরে নানারকম পরিবর্তন আসে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটা আকর্ষণ কিন্তু এই বয়সেই আসতে থাকে। সেই কারণেই এই বয়সেই সেক্স সম্পর্কে এখন থেকেই যে একটা প্রোপার শিক্ষা যে প্রত্যেকটি মানুষের প্রয়োজন তা গল্পের প্রতিটি চরিত্র বোঝা শুরু করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে সেক্স এডুকেশন যোগ করার দরকারটাও আপনি চরিত্রগুলোর মাধ্যমে অনুধাবন করতে শুরু করবেন। কিন্তু তা কি খুবই সহজ, সেক্স শব্দটা আমাদের জীবনে খুব দরকারী হলেও এটা এখনো আমাদের কাছে নোংরা শব্দই। তাই সেটা খুব বেশি মানুষ বুঝতে পারে না, বিশেষ করে মুড়ডেল হাইস্কুলের শিক্ষক, প্রিন্সিপাল আর অবশ্যই গার্ডিয়ানেরা। ফলাফল শিক্ষার্থীরা আরো জটিলতার মধ্যে পড়তে শুরু করে। কারণ এদের সবার জীবনেই কোন না কোন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তারা ঠিক জানে না কিভাবে সেখান থেকে বেরোতে হবে! ওটিস-মেইভের গোপন সেক্স ক্লিনিক আস্তে আস্তে সেখান থেকে তাদের বের করে আনা শুরু করলেও সেটি মাঝপথে থমকে যায়। তারপর? 

ওটিস-মেইভ কি আর কোনদিন পারে তাদের সেক্স ক্লিনিক চালাতে? 

তারা তাদের নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা থেকেও কি পারে বেরোতে? 

এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে সেক্স এডুকেশন এর ৩টি সিজন দেখে ফেলতে হবে। সত্যি কথা বলতে এই সিরিজটি দেখার সময়ে আমার মাথায় কয়েকটি প্রশ্ন প্রচন্ড ঘুরপাক খাচ্ছিল। 


আমরা কেন পারি না বলতে আমরা ভাল নেই? আমরা কেন কথা বলতে ভয় পাই? আমরা কেন জীবনের হিসেবটা সঠিক রাখতে পারি না? আমরা কেন ভালবাসার থেকে ঘৃণাকে সহজ মনে করি? কোন কিছু বলার থেকে চুপ করে থাকাকেই কেন শ্রেয় মনে করি? আমরা কেন নিজেকে গ্রহণ করতে ভয় পাই? আমরা কেন আরো একবার সুযোগ পেতে পারি না?
 

সেক্স এডুকেশন এর চরিত্রগুলোর মধ্যে আপনি যদি নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে সেক্স এডুকেশন সিরিজটি আপনার মধ্যে প্রভাব ফেললেও ফেলতে পারে। সিনেমা বা সিরিজ যাই বলি না কেন; যদি সমাজের আয়না হিসেবে কাজ করতে পারে তাহলেই সেটি সার্থক।

সেক্স এডুকেশন এর প্রতিটি চরিত্র পদে পদে মনে করিয়ে দিতে পারে আপনার ভিতরকার জটিলতাকে, চরিত্রগুলো যেন আমাদের আশে পাশে থাকা মানুষের মতই যারা কোনদিন নিজের মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। 

সে দিক থেকে হিসেব করলে সেক্স এডুকেশন একটি সার্থক টিভি সিরিজ। এটাকে নোংরা যদি আপনি বলতা চান তা আপনি বলতে পারেন দুটি কারণে, একটি আপনার সমাজ আপনাকে শিখিয়েছে সেক্সকে নোংরা বলতে। আর দুই নাম্বার হতে পারে আপনি হয়ত একবার হলেও সেই চরিত্রের মাঝে নিজেকে খুজে পেয়েছেন যা আপনাকে বার বার বিব্রত করতে পারে।

সত্যি কথা বলতে কে চায় নিজের দুর্বল দিকগুলো পর্দায়? আমি নিজেও চাই না,আপনাদের কাছ হতে কি করে আশা করি বলুন!


লিখেছেনঃ এসবি মেরাজ



No comments

Powered by Blogger.