লাইভ ফ্রম ঢাকা : জাদুর শহরের গল্প!

 


কবি হাসে, টাকা ভাসে

গঙ্গাবুড়ির শহরে

আসমান তুই কাঁদিস কেন


অট্টালিকার পাহাড়ে

মিছে হাসি, মিছে কান্না

পথে পথের আড়ালে

ওহ গ্রিন সিগনাল, রেড ওয়াইন

দেয়ালে, দেয়ালে


এই শহর, যাদুর শহর

প্রাণের শহর ঢাকারে।


চিরকুট ব্যান্ড


বাংলাদেশের অর্থনীতি শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসে। ঢাকায় টাকা উড়ে, এইরকম ভাবনা দেশের সিংহভাগ মানুষের মনে। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে, সে ভাবনার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।  


ঢাকায় মানুষের ভাগ্যের রাতারাতি পরিবর্তন হয়। এ যেন ভাগ্য পরিবর্তনের নগরী।  


'লাইভ ফ্রম ঢাকা' মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত সাদা-কালো এই সিনেমাটি স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ। পুরো সিনেমা শুট করা হয় একটি ৫০ মিলিমিটার লেন্সে। আর সিনেমার নির্মাণ ব্যয় ছিলো মাত্র মাত্র দশ হাজার ডলার বা আট লাখ টাকা। সিনেমায় অভিনয় করেন, মোস্তফা মনওয়ার, তাসনোভা তামান্না। অবশ্য এর আগে প্রাথমিক ভাবে “লাইভ ফ্রম ঢাকা' মুক্তি পেয়েছিলো ২ ডিসেম্বর, ২০১৬। 


'লাইভ ফ্রম ঢাকা' ২৭ তম সিংগাপুর আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিলো। ৫২টি দেশের শতাধিক সিনেমার সাথে প্রতিযোগিতা করে শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ও শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীর (মোস্তফা মনোয়ার) পুরষ্কার জিতে।  


কোনো মফস্বল বা গ্রাম থেকে নিজের ভাগ্য ফেরাতে ঢাকায় আসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ সাজ্জাদ(মোস্তফা মনোয়ার)। খানিকটা তার ভাগ্য ফেরেও। আবার সেই সাজ্জাদই শহরের অলি গলির কীটপতঙ্গ, অসুস্থ রাজনীতি, ধান্দাবাজি, দুর্গন্ধ, আর অনিয়মের খোঁড়া, গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়ে যায়।


নিজের প্রেমিকা রেহানাকে (তাসনোভা তামান্না) নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগে। যন্ত্রণায় ভোগে নিজের মাদকাসক্ত ছোট ভাই মাইকেলকে নিয়ে।

পাওনাদার এসে দরজায় কড়া নাড়ে বারবার। প্রচুর ধৈর্যশীল সাজ্জাদ বলে ওঠে, "আমি কোনো নবী-রাসুল না। আমি একটা মানুষ। আমার সহ্যের একটা লিমিট আছে।" 


তার মধ্যে জটিলতা বাড়তেই থাকে অনেকটা এই শহরের মতো, যে শহর ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে বেঁচে থাকার মাপকাঠিতে। সাজ্জাদ নিজের মধ্যে আবিষ্কার করে স্বার্থপরতা আর নিরাপত্তাহীনতা


তাই, সাজ্জাদ রাশিয়া যেতে চায়। সে তার জানলা নিয়ে তুষার পাত দেখে। রাশিয়া যাবার স্বপ্নে বিভোর হয় সাজ্জাদ। 


আরেকদিন- বাসায় খাবার খেতে খেতে হঠাৎ টেবিলে এক অদ্ভুত মেয়ের দেখা মেলে। যে বিচিত্রভাবে তাকিয়ে থাকে সাজ্জাদের দিকে। একটু পরে তার হাত দেখা যায়, শেকল পরানো। সাজ্জাদ চেপে ধরে আছে অত্যন্ত জিঘাংসায়। এই মেয়েটা রেহানা (সাজ্জাদের প্রেমিকা) না। 


প্রেমিকা রেহানার গর্ভে সাজ্জাদের সন্তান। একটা উন্নত জীবনের স্বপ্নে ঢাকা এসেছিলো সাজ্জাদ। সে ভুগতে থাকে হ্যালুসিনেশনে। 


সাজ্জাদের চরিত্র দিয়েই পরিচালক আমাদের জানায়, 

এই শহরে হাসিমুখ নেই, প্রাণ নেই, সুন্দরের বড় অভাব। সাজ্জাদ তার প্রায় নষ্ট পা নিয়ে ক্র্যাচে ভর করে হেঁটে বেড়ায়। পালাতে চায়। কিন্তু কোথায় পালাবে? 


সাজ্জাদের মত অনেকেই, পালাতে চায় এ শহর থেকে। কেউ পারে , আবার কেউ পারে না। তাদের হয়েই বোধহয় সাজ্জাদ সিনেমার ট্রেইলারে বলে, "এই বালের শহরে সবকিছুই উল্টাপাল্টা! ১২ মিলিয়ন মানুষ রাতদিন কুত্তার মতো একজন আরেকজনের সামনে পিছে ঘেউ ঘেউ করে। এত মানুষের ঘাম, রক্ত, আর গুয়ের গন্ধে আমার বমি আসে।’’


এতকিছুর পরও ঢাকা জাদুর শহর। 


ভুল কি বললাম? 


লিখেছেনঃ ফাইয়াজ আহমেদ

No comments

Powered by Blogger.